
রাজশাহীর বাগমারা যেন আঙুরের স্বর্গরাজ্য! সফল উদ্যোক্তা আরমানের হাত ধরে মিষ্টি বিপ্লবরাজশাহীর বাগমারা উপজেলা কৃষি ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এক সময়ের পতিত জমি আজ ভরে উঠেছে মিষ্টি আঙুরের সবুজ আর সোনালী থোকায় থোকায়। আর এই সাফল্যের পেছনে রয়েছেন এক তরুণ ও উদ্যমী কৃষক – যোগীপাড়া ইউনিয়নের ভটখালী গ্রামের **আরমান হোসেন**।আরমান, যিনি একসময় হয়তো অন্য দশজন তরুণের মতোই গতানুগতিক জীবনের স্বপ্নে বিভোর ছিলেন, আজ তিনি নিজের গ্রামে গড়ে তুলেছেন এক সফল আঙুর বাগান। তার অক্লান্ত পরিশ্রম আর আধুনিক চাষ পদ্ধতির প্রয়োগে বাগমারা এখন মিষ্টি আঙুরের নতুন ঠিকানা হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে।যোগীপাড়া ইউনিয়নের ভটখালী গ্রামে দিগন্তজোড়া আঙুর বাগান দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। সবুজ লতানো গাছের সারি আর তার মাঝে ঝুলে থাকা লোভনীয় মিষ্টি আঙুরের থোকা জানান দেয় আরমানের সাফল্যের গল্প। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আরমান বেশ কয়েক বছর আগে ইউটিউব এবং অন্যান্য কৃষিভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম থেকে আঙুর চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করেন। এরপর সাহস করে পতিত জমিতে শুরু করেন এই নতুন ফসল ফলানো।প্রথম দিকে নানা প্রতিকূলতা এলেও, আরমান ধৈর্য হারাননি। নিয়মিত পরিচর্যা, সঠিক সময়ে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি ধীরে ধীরে সফলতা লাভ করেন। বর্তমানে তার বাগানে বিভিন্ন উন্নত জাতের মিষ্টি আঙুরের ফলন হচ্ছে, যা স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি জেলার বাইরেও সরবরাহ করা হচ্ছে।আরমানের এই উদ্যোগ শুধু তাকে আর্থিকভাবেই স্বাবলম্বী করেনি, বরং স্থানীয় অনেক মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তার বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন বহু শ্রমিক। এছাড়াও, তার সাফল্য দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও আঙুর চাষে আগ্রহী হচ্ছেন, যা বাগমারার কৃষি অর্থনীতিতে এক নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে।সফল উদ্যোক্তা আরমান হোসেন জানান, “প্রথম দিকে অনেকেই আমার এই উদ্যোগকে পাগলামি ভেবেছিল। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল এবং আমি চেষ্টা চালিয়ে গেছি। এখন আমার বাগানের আঙুর শুধু আমাকে নয়, আমার এলাকার অনেক মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। আমি চাই, বাগমারার আরও অনেক কৃষক আঙুর চাষে এগিয়ে আসুক এবং আমাদের এই অঞ্চল মিষ্টি আঙুরের জন্য বিখ্যাত হোক।”বাগমারা উপজেলার কৃষি বিভাগও আরমানের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে এবং তাকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে। তাদের মতে, আরমানের সাফল্য অন্যান্য কৃষকদের জন্য অনুপ্রেরণা এবং বাগমারাতে আঙুর চাষের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎের ইঙ্গিত দেয়।যোগীপাড়া ইউনিয়নের ভটখালী গ্রামের আরমান এখন শুধু একজন সফল কৃষকই নন, তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা এবং পরিবর্তনের অগ্রদূত। তার হাত ধরে রাজশাহীর বাগমারা সত্যিই মিষ্টি আঙুরের রাজ্যে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। এই তরুণ উদ্যোক্তার গল্প নিঃসন্দেহে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য এক আশার আলো।